জাবিতে সেশনজটের কবলে পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা

11

ডেস্ক রিপোর্ট: স্বাভাবিক সময়ে চার বছরে অনার্স স্নাতক শেষ করার কথা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তবে সেশনজটের কবলে পড়ে পাঁচ বছরেও স্নাতক সম্মানও শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাচঁ বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিভাগগুলো হলো নৃবিজ্ঞান, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের ৪৬তম আবর্তনের (২০১৬-১৭) সেশনের শিক্ষার্থীরা এখনো স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ করতে পারেনি। ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮) সেশনের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ক্লাস চলমান, ৪৮তম ব্যাচের (২০১৮-১৯) সেশনের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষে, ৪৯তম ব্যাচের (২০১৯-২০) তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান ও ৫০তম ব্যাচের (২০২০-২১) সেশনের শিক্ষার্থীদের কিছুদিন আগে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হলো। অথচ ৪৭ ও ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ করতে পারেনি।

এদিকে নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে সম্প্রতি। ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্স ক্লাস চলমান রয়েছে ও তাদের স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষা আগামী বছরের মার্চ মাসে হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী। একই দিকে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষে ও ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলমান। ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর শেষ করতে পারছেন না তারা।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হয়েছে অক্টোবরের ২০ তারিখ হতে, ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর পর্বের ক্লাস শুরু করেছেন, ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষে ও ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস চলমান। ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারা মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষায় বসেছে ইতোমধ্যে। ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরও মাস্টার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তারা স্নাতকোত্তর পর্বের ক্লাস শুরু করেছে।

তুলনামূলক সাহিত্যতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর , ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও স্নাতকোত্তর, ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষে ও ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় বর্ষে। অন্যান্য বিভাগগুলোতে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলেও এ বিভাগে ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা মাসখানেক আগে চতুর্থ বর্ষে উত্তীর্ণ হয়েছে। এছাড়াও ৪৭ ও ৪৮তম ব্যাচের মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শেষ হয়নি।

পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর, ৪৮তম ব্যাচ স্নাতক চতুর্থ বর্ষের ক্লাস শেষ হয়েছে সম্প্রতি, ৪৯তম ব্যাচ চতুর্থ বর্ষে, ৫০তম ব্যাচ তৃতীয় বর্ষে, ৫১তম ব্যাচ দ্বিতীয় বর্ষে, ৫২ ও ৫৩তম ব্যাচ প্রথম বর্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ করার কথা থাকলেও ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থীরাই শেষ করতে পারেনি।

শিক্ষার্থীরা জানান, ক্লাসরুম সংকট, একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ না করা, শিক্ষকদের বিদেশগমনের জন্য পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করতে দেরি হওয়াসহ নানা কারণে সেশনজটে পড়েছে তারা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোর্স সম্পন্ন করে না। তাই বিভাগে কৃত্রিম সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে। এরই প্রতিফল হিসেবে শিক্ষার্থীদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।

পরিচয় গোপন করা শর্তে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, বিভাগের কিছু কিছু শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। সময়মতো টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ও খাতা না দেওয়ার কারণে আমাদের এই সেশনজটে পড়তে হয়।

এ বিষয়ে জাবি ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান মুরাদ বলেন, ছাত্রসংসদের অকার্যকারিতা, মাস্টারপ্ল্যানড একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, শিক্ষকদের ক্লাস নিতে অবহেলা, ক্লাসরুম ও শিক্ষক সংকট ইত্যাদি কারণে কোনো কোনো ডিপার্টমেন্টে সেশনজট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফার্মেসি, রসায়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, চারুকলা, তুলনামূলক সাহিত্যসহ বেশকিছু বিভাগের সেশনজট উল্লেখ করার মতো, যা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারকে হুমকিতে ফেলছে। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল প্রশাসনকে এই সেশনজট নামক ক্যারিয়ারঘাতী প্রথাকে ক্যাম্পাসের সকল বিভাগ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

জাবি শিবিরের সাধারণ সম্পাদক মহিবুর রহমান মুহিব বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ‘সেশনজট’ একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাধি। সেশনজট শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর একাডেমিক ক্যারিয়ার এবং প্রোডাক্টিভিটিরই ক্ষতি করে তা নয়, এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত করে তার পরিবার এবং বৃহৎ পরিসরে রাষ্ট্রকেও। প্রশাসনের তদারকির অভাব এবং শিক্ষকদের দায়িত্ববোধের ঘাটতি দূর করা গেলে সেশনজট নামক সমস্যা থেকে শিক্ষার্থীরা মুক্তি পেতে পারে।

এ বিষয়ে উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা সেশনজট নিরসনে ইতোমধ্যে ফ্যাকাল্টির ডিনদের নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিটি বিভাগকে একাডেমিক ক্যালেন্ডার মেনে কোর্স শেষ করার নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের আগামীতে ৫ বছর মেয়াদী ক্যালেন্ডার করার পরিকল্পনা করেছি। প্রথম বর্ষ থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত কোনো সময়ে কি করতে হবে তার সম্পূর্ণ সময়সূচি দিয়ে দেওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা হবে।

তথ্য: দ্য নিউজ