সাবেক যুব প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনকে ৩০০ কোটি টাকার কাজ দিল অধিদপ্তর

3

ডেস্ক রিপোর্ট: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন মাসুদ আলমের প্রতিষ্ঠানকেই ৩০০ কোটি টাকার কাজ দিল যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। ২৮ হাজার ৮০০ জনকে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেবে ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি।

গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

প্রকল্পে যা আছে:
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এটি শেষ করতে চায়। প্রতি জেলায় ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এক বছরে ৫০ জনের চারটি ব্যাচ পাবে এ প্রশিক্ষণ। তাদের দিনে ২০০ টাকা ভাতা ও ৩০০ টাকার খাবার দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহীদের কম্পিউটার সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান থাকতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কর্মপ্রত্যাশী নারী-পুরুষ এ প্রকল্পের প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন।

ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, দরপত্রে ২০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। তবে গ্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড, বাংলাদেশ আইটি ইনস্টিটিউট, এসইও এক্সপেইট বাংলাদেশ লিমিটেড এবং নিউ হরাইজনস সিএলসি অব বাংলাদেশ। কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়ন যোগ করে প্রথম হয় ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড।

প্রতিমন্ত্রী রাসেলের ঘনিষ্ঠজন মাসুদ আলমই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং এই কাজ পাচ্ছে গত অক্টোবরে এমন খবর প্রকাশিত হলে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ আলম ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর মাছরাঙা টেলিভিশনে রাঙা সকাল নামে একটি সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আমরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমার বাবা আজাহার উদ্দিন আওয়ামী লীগ করতেন বলে তখন তিনি পালিয়ে যান। ফলে প্রাইমারি স্কুলের পড়াশোনাও শেষ করতে পারিনি।’ ৭ আগস্ট আব্দুল্লাহপুরের হাউসবিল্ডিং এলাকার ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে বস্তাভর্তি কয়েক কোটি টাকাসহ আটক হন মাসুদ আলম। তিনি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩’-এ ভূষিত হয়েছেন। এর আগে ২০২২ সালে তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ‘শেখ হাসিনা ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ গ্রহণ করেন। ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের পাশাপাশি প্রমিজ আইটি সলিউশন, ফটোফিক্সা, নগদহাট, ক্লিক দ্য ফটোসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে মাসুদের।

সূত্র জানিয়েছে, মাসুদ আলম সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে ওই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করেছেন। নিজের এলাকার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেন মাসুদ। নিজের নির্বাচনী পোস্টারে রাসেলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাকের ছবি ব্যবহার করেছেন।

সাবেক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মানুষ অনেক কথাই বলে, সব সত্য নয়। যুব মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজ সফলভাবে শেষ করেছি।’ দুদকে তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভুয়া বলে দাবি করেন মাসুদ। ৭ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়িতে বস্তাভর্তি টাকাসহ আটকের বিষয়ে বলেন, মাত্র দেড় কোটি টাকা ছিল। সেগুলো তাঁর প্রতিষ্ঠানের বেতনের টাকা। সেনাবাহিনীর কাছে সেই হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ায় তারা তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল।