জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি কোটা বাতিল, পোষ্য কোটা সংস্কার, অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি কমানো ৪ দফা দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন একদল শিক্ষার্থী।
আজ রবিবার, বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে কোটা ব্যাবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে ৪ দফা দাবি নিয়ে কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি কোটা বাতিল করা হয়েছে।
আজকের মানববন্ধনে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসানের সঞ্চালনায় সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন, ইতিহাস বিভাগ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) শাকিল আলী, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক আব্দুর রশিদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মানববন্ধনে যৌক্তিক দাবি গুলো অতিসত্বর বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে আহবান জানিয়ে তূলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন,
আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবত এই বৈষম্যমূলক কোটা ব্যাবস্থা দূর করার জন্য আন্দোলন করে আসছিলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময় আমাদের মৌখিক আশ্বাস দিলেও, এখনো প্রশাসন এ বিষয়ে কোন প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই কোটা নামক বৈষম্য ব্যাবস্থা যতদিন পর্যন্ত বাতিল না করবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।
আমাদের খুবই লজ্জা হয়, খুবই কষ্ট লাগে যখন গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসে আমাদের এসকল কোটা ব্যাবস্থা দূর করার জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে দাড়াতে হয়। আমরা সকলে জানি আমাদের যখন গনঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলছিলো, আমরা চেয়েছিলাম সম্পূর্ণ কোটা ব্যাবস্থার কবর দিয়ে মেধার ভিত্তিতে যেন দেশ গঠন করার জন্য। কারণ আমরা জানি আগামীর বাংলাদেশ, আগামীর বিশ্ব সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক হবে। কিন্তু ভর্তি পরিক্ষায় যদি আমরা মেধাবীদের সেই জায়গাটা তৈরি করে দিতে না পারি, যদি ভর্তি পরিক্ষার সময় কোটা ব্যাবস্থা নামক যে ব্যাবস্থা আছে সেই ব্যাবস্থার মাধ্যমে অযোগ্যদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেই, সেখানে আমরা কিভাবে আগামীতে মেধাভিত্তিক দেশ গঠনের স্বপ্ন দেখি।
ইতিহাস বিভাগ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) শাকিল আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় ভিসি কোটা ও মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনি কোটা প্রজ্ঞাপন দিয়ে বাতিল করতে হবে এবং পোষ্য কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা সায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি কোটা থাকতে পারে না। যারা ভিসি কোটায় ভর্তি হয়েছিল তাদের অপকর্ম আমরা দেখেছি। যেখানে একজন সাধারণ শিক্ষার্থী ৬০ নম্বর পেয়েও চান্স পায়নি সেখানে ক্ষমতার ব্যবহার করে অকৃতকার্য হয়েও মাত্র ২৭ নম্বর পেয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছে। যেখানে বিসিএসের মতো পরিক্ষায় আবেদন ফি ২০০৳ সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় আবেদন ফি ৭০০৳ থেকে ১০০০৳ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এবছরই এটাকে কমিয়ে একটা যৌক্তিক ফি নির্ধারণ করতে হবে।
সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ কোনো প্রকার ভিসি কোটার আইন নেই এবং দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর ছাড়া অন্যকোথাও অথর্ব ভিসি কোটা নাই। পোষ্য কোটায় মাত্র ২৬ নাম্বার পেয়ে পাশ না করেও ভর্তির সুযোগ পায়। এই পোষ্য কোটা যৌক্তিক সংস্কার করে ন্যুনতম পার্সেন্টেজ মার্ক রাখতে হবে যাতে পাশ করে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানে যে বৈষম্যের জন্য আবু সাইদ, মুগ্ধরা জীবন দিয়েছে। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না করা হয় তাহলে উপাচার্য ২৪ এর যে শহীদদের ম্যান্ডেট নিয়ে গদিতে বসেছে সেই গদিতে থাকতে দেবনা। আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যাব।