প্রায় সাড়ে তিন মাস পর সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল মেরামত শেষে সচল হয়েছে; এতে ধীরে ধীরে গ্যাস সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে।
সাগরে নিম্নচাপ ও ভারী বর্ষণের কারণে গত তিন দিন ধরে দেশে বিদ্যুতের চাহিদাও প্রায় চার হাজার মেগাওয়াট কমে ১০ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে। ফলে বেশ কয়েকদিন থেকে গ্যাস সংকটের এ সময়ে লোডশেডিং দেখতে হচ্ছে না রাজধানীবাসীকে।
রোববার পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ”সাগরে ভাসমান সামিটের এলএনজি টার্মিনাল মেরামত শেষে গত দুই দিন ধরে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এ সমস্যার সমাধান হয়েছে বলা যায়।”
আগামী মাসের শুরুর দিকে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তবে এর আগেও পরিস্থিতি ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি। বলেন, ওমান থেকে বিশেষ অনুরোধে কিছু এলএনজি পাওয়ার কথা চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে গত ২৬ মে বঙ্গোপসাগরে দুটি এলএনজি টার্মিনালের (এফএসআরইউ -ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) মধ্যে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সাড়ে তিন মাস পর তা সচল হওয়ার খবর এল।
দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছিল। একটি টার্মিনাল বিকল হওয়ার কারণে দিনে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ কমে গিয়েছিল।
টার্মিনালটি বিকল থাকার সময়ে গ্যাস সংকটের কারণে দেশে কয়েক দফায় লোডশেডিং দেখতে হয়েছিল। বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ তিন হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিল। ফলে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র দিনে ৫ থেকে ১০ ঘণ্টার লোডশেডিংও দেখা দিয়েছিল।
পেট্রোবাংলার গত কয়েকদিনের প্রতিবেদনের তথ্যে দেখা যায়, দুটি এফএসআরইউ (এলএনজি টার্মিনাল) থেকে দৈনিক ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার বিপরীতে ০৯-১০ সেপ্টেম্বর সরবরাহ হয়েছে ৫৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ওইদিন দেশের মোট সরবরাহ ছিল ২৫৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট। স্বাভাবিক সময়ে সরবরাহ হত প্রায় ৩১০০ মিলিয়ন ঘনফুট; যদিও দেশে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক ৩৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কাছাকাছি।
পরের দুই দিন ১১-১২ সেপ্টেম্বর এফএসআরইউ থেকে সরবরাহ বেড়ে ৬১৭ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়; ফলে জাতীয় সরবরাহ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৩২ মিলিয়ন ঘনফুটে। সবশেষ শনিবারও এফএসআরইউ থেকে ৫৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছে।
এলএনজি টার্মিনালে রেমালের ধাক্কা, সংকট সিএনজি স্টেশনে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ বলেন, “এফএসআরইউ মেরামত হয়েছে। গত তিন দিন ধরে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস দিচ্ছে। এফএসআরইউর ভেতরে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মত এলএনজি ছিল। সেটা এখন একটু একটু করে সরবরাহ করা হচ্ছে। ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে দিলে ৭/৮ দিন সচল থাকবে।”
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে ২৬ মে সামিটের টার্মিনালটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। তখন দেশের শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দেওয়ার পাশাপাশি গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও ৫ হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে এসেছিল।
গত ২০ মে বিদ্যুতের উৎপাদন প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেদিন ১৩ হাজার ৯০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছিল ১৩ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। সেখানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হচ্ছিল ৭ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট।
শনিবারের উৎপাদন চিত্রে দেখা যায়, গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদন হচ্ছে ৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ গ্যাস সরবরাহ আগের অবস্থায় ফিরে গেলে বিদ্যুতের উৎপাদনও আরও দুই হাজার মেগাওয়াট বাড়তে পারে।
আসছে আরও এলএনজি
সামিটের এফএসআরইউটি মেরামত হওয়ায় আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত বাজার থেকে এলএনজি কেনার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নতুন করে তিন কার্গো এলএনজি উন্মুক্ত বাজার থেকে কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দরপত্র চূড়ান্ত করা হবে এবং এরপর তা ক্রয় কমিটিতে উত্থাপন করা হবে।
“২২ তারিখে প্রস্তাব নেবো। ২৪ সেপ্টেম্বর সেটা ক্রয় কমিটিতে পাঠানো হবে। ২৫ তারিখে চুক্তি স্বাক্ষর করে ৪/৫ দিনের মধ্যেই এলএনজি পাওয়া সম্ভব হবে। সেই ক্ষেত্রে পরবর্তী মাসের প্রথম ও অথবা দ্বিতীয় দিন পূর্ণ উদ্যোমে এলএনজি সরবরাহ করা যাবে।”
এর আগেই সামিটের টার্মিনালটি কাজে লাগানোর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওমানকে বিশেষ অনুরোধ করে এক কার্গো এলএনজি আনা হচ্ছে। সেটা ২৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই বাংলাদেশে পৌঁছাবে। ফলে ওইদিন থেকেই ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। সুতরাং বলা যায় ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলেন, এখন খোলাবাজারে প্রতি ইউনিট ১২ থেকে ১৪ ডলারের মধ্যে এলএনজি বিক্রি হচ্ছে।
ডলার সংকটের কারণে এলএনজি কেনাকাটা হুমকিতে পড়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের একটি প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, এটা সঠিক নয়। বকেয়া ৫০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এই সপ্তাহের মধ্যে তা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক কমে যাবে।
“পেট্রোবাংলার টাকার সংকট নেই। ডলার সংকটের কারণে অনেক সময় পেমেন্টে বিলম্ব হচ্ছে। এটা বড় কোনো বিষয় নয়।”