দুবলার চরে এখনও বিক্রি হয় শিশুশ্রম !

3

চয়ন মজুমদারঃ সুন্দরবনের দুবলার চরে এখনও অবাধে কেনা হচ্ছে শিশুশ্রম। এরপর স্কুল পড়ুয়া শিশুদের শুরু হয় বন্দি জীবন। এভাবে দরিদ্রতাকে পুঁজি করছেন জেলে মহাজনেরা। অভিযোগ উঠেছে শিশুর শ্রম কেনাবেচায় প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছেনা। এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি তুলেছেন মানবাধিকার কর্মিরা।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুশ্রমের আইন না জানা নাকি আইন না মানার প্রবনতা নাকি দারিদ্রের বেড়াজালে আটকে পড়া। নানা পক্ষের নানারকম যুক্তি থাকলেও এটা স্পষ্ট শ্রম আইনের লংঘন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন ?

 

সম্প্রতি দুবলার চরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১৪ বছরের সাব্বির আহম্মেদ। হাবিবুল্লাবাদ নামের এক বহাদ্দরের কাছে বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। এসময়ে বের হতে পারবেনা দুবলার চর এলাকা থেকে। এই বন্দি জীবন আর শাররিক নির্যাতনের ভয়ে সাব্বির চেষ্টা করেছিল পালানোর। পারেনি ! সাব্বিরের মতো আরেকজন ১৪ বছরের সাগর। ছয় মাসের জন্য মাত্র ৩৫ হাজার টাকায় সাগরকে কিনেছে মিজান নামে এক বহাদ্দর। সংসারের অভাব অনটন মেটাতে দূর্গম চরাঞ্চলে দিন রাত কাজ করছে তারা।

 

এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে পুরো দুবলার চরে তাদের বহাদ্দরকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও দেখা মেলে আরও কয়েক জন শিশুর। তাদের মধ্যে শিহাব উদ্দিনের (১৩) কাছে জানতে চাওয়া হলে সে বলে, সাতক্ষীরা জেলার আছাব উদ্দিন বহাদ্দর তাকে নিয়ে এসেছেন দুবলার চরে। পাঁচ মাস এখানে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ শেষে তাকে ৩৫ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হবে। বাবা বেঁচে নাই তাই সংসারের ঘানি টানতে সে এই চরে এসেছে।

 

শিশুদের দিয়ে এভাবে কাজ করানো ‘অপরাধ’ উল্লেখ করে মোংলা মানবাধিকার সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি নুর আলম শেখ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে এর প্রবনতা বাড়তেই থাকবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০ এ যে আইন আছে সেটার পরিবর্তন আনতে হবে।

 

এ বিষয়ে বনবিভাগের দুবলা জেলে পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খলিলুর রহমান বলেন, দুবলার চরে অবস্থানকারীদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া, শিশু শ্রম বন্ধসহ বনের অভ্যন্তরে যাতে কেউ অপরাধ করে পার না পায় সেকারণেই এবছর আইডি কার্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মৌসুমের প্রথম সপ্তাহ থেকেই জেলেদের আইডি কার্ড প্রদান শুরু করা হয়েছে। এই আইডি কার্ডে দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষর থাকবে। আইডি কার্ড না থাকায় বিগত বছরে জেলেদের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। যে যার মতো কাজ ও চলাচল করেছে। কে শিশু আর কে বয়স্ক তাও বোঝা যায়নি। অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছে। এখন কার্ডের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

 

কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত এই বন কর্তার বক্তব্যের বাস্তবে মিল পাওয়া যায়নি দুবলার চরে।

 

জানা গেছে, শুঁটকি উৎপাদনকারী দুবলার চরগুলোতে এ বছর জেলেদের থাকা ও শুঁটকি সংরক্ষণের জন্য ৯৮৫টি ঘর, ৫৭টি ডিপো ও ৯৩টি দোকান ঘর স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত মৌসুমের চেয়ে এবার কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে এই সংখ্যা। শুঁটকি উৎপাদনের লাইসেন্সধারী ১৭ জন বহদ্দার বা মহাজনের অধীনে দুবলার আলোরকোল, মাঝের কিল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারা চরসহ চারটি চরে অন্তত ১০ হাজারেরও বেশি জেলে ও শ্রমিক অবস্থান করবে। তারা পাঁচ মাস ধরে সাগরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে নিয়োজিত থাকবে এই চরগুলোতে।