নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ঘিঞ্জি পরিবেশ। ভাঙাচোরা চারটি ঘর। দুটিতে হয় রান্নাবান্না। দুটিতে বসবাস। ঘর দুটিতে গাদাগাদি করে ১৮ জন মানুষ থাকেন। এদের মধ্যে বয়স্ক চার জন বাক প্রতিবন্ধি। নয় জন শিশু ও একজন বৃদ্ধা। নুন আন্তে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। এ দেখেও মন গলেনি প্রভাবশালী সালিসদারদের। তাঁদের নির্দেশ ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ঘরবাড়ি ভেঙে জায়গা ফাঁকা করে দিতে হবে। তা-না হলে দখল করা হবে ঘরসহ জায়গা। এমন হুমকির কথা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে বসতভিটা ও মাথাগোজার ঠাঁই রক্ষার জন্য বৃদ্ধা বিলকিস বেগম (৬০) লিখিত আবেদন করেছেন। ঘটনাটি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের।
বিধবা বিলকিস বেগমের অভিযোগ পত্র ও সরেজমিনে জানা গেছে, তাঁর স্বামী মহিউদ্দিন শেখ ২০১১ সালে বারাশিয়া গ্রামের আহম্মদ আলী শেখের কাছ থেকে কালশিরা মৌজার এসএ-৬২২, ডিপি ১১৪৫ নং খতিয়ানে ৭৪/৯৩ বুজরত (সাবেক) দাগে তিন শতক জমি ক্রয় করেন। ক্রয়ের পর উক্ত জমিতে তাঁরা ঘরবাড়ি নির্মাণ করে প্রতিবন্ধি ছেলেদের ও পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছেন। তাঁর স্বামী চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারী মৃত্যুবরণ করেন। মহিউদ্দিন শেখ মারা যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ বারাশিয়া গ্রামের ধলু মোল্লার ছেলে আলী মোল্লা, মিরাজ মোল্লা ও রিয়াজ মোল্লা তাদের জমি দখল নিতে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি প্রদান করে আসছেন। সম্প্রতি প্রতিপক্ষরা তার ছেলের দোকানের বসে প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ে এক সালিস ব্যবস্থার আয়োজন করে। সেখানে বৃদ্ধা বিলকিসদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে মর্মে সাদা কাগজে তাঁর ছেলে মোঃ লাবলু শেখ ও তার ফুফাতো ভাই দাউদ শেখের নিকট থেকে জোর পূর্বক স্বাক্ষর রাখেন। তাদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়েছে। নইলে তারা জোর পূর্বক দখল নিবেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বৃদ্ধা বিলকিস বেগম সাংবাদিকদের কান্নাজড়িতকণ্ঠে বলেন, ‘আমার ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে। এদের মধ্যে ৩ ছেলে ও এক পুত্রবধূ বাক প্রতিবন্ধি (বোবা)। এই জন্য বিবাদী আমার পরে জোর জুলুম করে যাচ্ছে। সালিসদার টিপু শিকদার, আউলিয়া শেখ, বাদশা মুন্সি ও ইকবাল শেখ প্রভাবশালী নেতা। তাদের ভয়ে কেউ টু শব্দ করেন না। তাই কোন উপায় না পেয়ে জায়গা ও বসতবাড়ি রক্ষার জন্য মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকালে ইউএনও স্যারের কাছে আবেদন করেছি।’
এ ব্যাপারে আলী মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারঁ দাদা লাল মিয়া ১৯৮১ সালে আহম্মদ আলী শেখের কাছ থেকে তিন শতক জমি ক্রয় করেছেন। সেই জায়গায় বিলকিস বেগমরা থাকে। এ নিয়ে তারা ২ বার আদালতে মামলা করে ঠকেছে। স্থানীয় ৩০ বার সালিস বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ দেড়মাস আগে টিপু শিকদার, আউলিয়া শেখ, বাদশা মুন্সি ও ইকবাল শেখ সালিস করে দিয়েছেন। সালিসনামা রয়েছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তারা ওই জায়গা ছেড়ে চলে যাবে। তা না হলে সালিসদার যা বলে আমি তাই করব।’
সাংবাদিকদের বাদশা মুন্সি বলেন, আমি সালিসদার নই-ওখানে কাগজপত্র দেখতে আলী মোল্লার মোহরী হিসাবে গিয়েছিলাম।’
ইকবাল শেখ বলেন, ‘আমি সেটেলমেন্টে কাজ করি। জরুরী কাজে যশোর জোনাল অফিসে আছি। পরে ফোন দেন বলে লাইন বিছিন্ন করেন।’
নিজেকে ডাক্তার দাবী করে আউলিয়া শেখ সাংবাদিকদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘ওটা নিজামের দখলে। নিজাম বিভিন্ন লোককে প্রতিবন্ধি সাজিয়ে মানুষের জায়গা দখল করে রেখেছে।
টিপু শিকদার বলেন, ‘সালিস চলাকালে শেষের দিকে আমি গিয়েছিলাম। দাউদ শেখ উভয়ের আত্মীয়। সে সব কিছু জানে।’
দাউদ শেখ বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি বেশী কিছু বলতে চাই না। শুক্রবার বিলকিস বেগমের বড় ছেলে লাভলু আসবে। সে যেটা ভাল বোঝে সেটা করবে। ’
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পাল বলেন, ‘বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সাথে দেখব এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিব।’