এশিয়ার দশ দেশের জাতীয় সংগীত

116

বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই আলোচনায় আবেগ অনুভূতির যেমন স্থান পেয়েছে, তেমনি এই গান রচনার প্রেক্ষাপট, সুরের উৎস, গানের কথাসহ অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে।

জাতীয় সংগীতে আসলে কী থাকে, সেই প্রশ্নের জবাব পেতে বাংলাদেশের প্রতিবেশি দেশগুলোর জাতীয় সংগীতের কথা এবং তাতে কোন বিষয়বস্তু প্রাধান্য পেয়েছে সেদিকে দৃষ্টি দিতে পারি।

এখানে বলে নেওয়া ভালো, জাতীয় সংগীতের সুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই লেখায় সুরের বিষয়টিকে তুলে ধরা সম্ভব হয়নি। প্রতিটি দেশের সরকারি বা রাষ্ট্রীয় নথিপত্রে বা ডিজিটাল আর্কাইভে তাদের জাতীয় সংগীত লিখিতভাবে তুলে ধরা থাকে। এই সংকলনে সেসব সরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রকাশনা থেকে দেশগুলোর জাতীয় সংগীতের হালনাগাদ সংস্করণের বাংলা অর্থ করা হয়েছে।

ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি উৎস থেকে নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত রেফারেন্সের ঘাটতি বা খুঁজে বের করার সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক তথ্যের সঠিকতা সম্পূর্নরূপে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এই উপস্থাপনায় কোনো ভুল বা তথ্যের ঘাটতি থাকলে তা পরিবর্তন বা সংশোধনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার ১০টি উল্লেখযোগ্য দেশের জাতীয় সংগীতের বাংলা অর্থ (ভাবানুবাদ), রচনার প্রেক্ষাপট ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস এ লেখায় তুলে ধরা হলো। আলোচিত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীতের বাংলা সংস্করণ থাকায় তা হুবহু এখানে তুলে ধরা হয়েছে।

আমার সোনার বাংলা

জাতীয় সংগীত, বাংলাদেশ

মূল ভাষা: বাংলা

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,

মরি হায়, হায় রে—

ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—

কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,

মরি হায়, হায় রে—

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: বঙ্গভঙ্গের পর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাকে নিয়ে একটি গান লিখেছিলেন যা ১৯০৫ সালে একইসঙ্গে বঙ্গদর্শন ও বাউল-এর সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। বাদ্যযন্ত্রের স্বরলিপিসহ গানটি একই মাস ও বছরে সংগীত বিষয়ক সাময়িকী সংগীত বিজ্ঞান প্রবেশিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বাউল গায়ক গগন হরকরার দাদরা তালে করা “আমি কোথায় পাবো তারে” গানটির সুর থেকে আমার সোনার বাংলার সুর নেওয়া হয়। এই গানের প্রথম দশটি লাইন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত, যা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গৃহীত হয়।

জনগণমন

জাতীয় সংগীত, ভারত

মূল ভাষা: বাংলা

জনগণমন অধিনায়ক জয় হে ভারত-ভাগ্য-বিধাতা

পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মারাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ

বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছল-জলধি-তরঙ্গ

তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিস মাগে,

গাহে তব জয়গাথা।

জনগণ-মঙ্গল-দায়ক জয় হে ভারত-ভাগ্য-বিধাতা

জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয়, জয় হে।।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ভারতের প্রধান ভাষা হিন্দি হলেও দেশটির জাতীয় সংগীত বাংলায় লেখা হয় প্রথম। এর রচয়িতা নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা প্রথম ছাপা হয়েছিল ১৯১১ সালে। মূল গান ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা’ একটি ব্রাহ্ম স্তোত্র বা প্রার্থনা সংগীত।

এর প্রথম স্তবকটি ভারতের গণপরিষদ কর্তৃক জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়ে ১৯৫০ সালে। সংগীতটি বহুত্ববাদের চেতনা বা আরও জনপ্রিয় পরিভাষায় ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ ধারণাকে প্রকাশ করে, যা ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল।

 

পুণ্যভূমি

জাতীয় সংগীত, পাকিস্তান

মূলভাষা: উর্দু

ধন্য হোক পুণ্যভূমি

ধন্য হোক এই সুন্দর ভূমি।

তুমি উচ্চ সংকল্পের প্রতীক,

হে পাকিস্তানের মাটি!

ধন্য বিশ্বাসের ঘাটি।

এই পবিত্র ভূমির কর্তৃত্ব,

জনগণের ভ্রাতৃত্বের শক্তি,

জাতি, দেশ ও রাষ্ট্র

চিরন্তন মহিমায় জ্বলজ্বল করুক!

আমাদের আকাঙ্ক্ষা গন্তব্যে পৌছাক।

অর্ধচন্দ্র এবং তারার পতাকা

অগ্রগতি ও পরিপূর্ণতার পথ দেখায়,

যা আমাদের অতীতের ভাষ্যকার, বর্তমানের গৌরব,

ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা!

খোদার ছায়ায় শান-শওকত।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫৪ সালের আগস্টে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয় পাকিস্তানের এই জাতীয় সংগীতটি। প্রাচ্য সংগীতের উপর ভিত্তি করে করা এই গানের কথা লিখেছেন পাকিস্তানের প্রখ্যাত কবি আবুল আছার হাফিজ জুলুন্ধ্রি। সুর করেছেন আহমেদ জি চাগলা।

এটি ১৯৫০ সালের ১ মার্চ প্রথম কোনো কথা ছাড়াই যন্ত্রসংগীতে বাজিয়ে শোনায় করাচিতে ইরানের শাহের রাষ্ট্রীয় সফরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি ব্যান্ড। পরে ১৯৫০ সালের ৩ মে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বাজানো হয়েছিল। এটি ১০ আগস্ট ১৯৫০-এ ন্যাশনাল অ্যানথেম কমিটির (এনএসি) সামনে বাজানো হয়েছিল।

 

শত ফুলের মালা

জাতীয় সংগীত, নেপাল

মূল ভাষা: নেপালি

আমরা শত ফুলের এক মালা নেপালি

সার্বভৌম ছড়িয়ে মেচি থেকে মহাকালী।

প্রাকৃতিক সম্পদের সমৃদ্ধ অঞ্চল

দুঃসাহসীদের রক্তে স্বাধীন ও অটল।

জ্ঞানভূমি, শান্তিভূমি, সমতল,

পাহাড় চূড়া, অখন্ড আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি নেপাল।

বহু জাতি, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি বিশাল

অগ্রগামী রাষ্ট্র আমাদের, জয় জয় নেপাল।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: নেপালের জাতীয় সংগীত (সায়ুন থুঙ্গা ফুলকা) ৩ আগস্ট ২০০৭ অন্তর্বর্তী সংসদের স্পিকার সুভাষ চন্দ্র নেমবাং কর্তৃক সিংহ দরবারের অভ্যন্তরে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছিল। এই সংগীতের কথা লিখেছেন কবি প্রদীপ কুমার রায় যার ছদ্মনাম ব্যাকুল মাইলা।

দেশটির জাতীয় সংগীতের কথাগুলো মূলত সার্বভৌমত্ব, ঐক্য, সাহস, অহংকার, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অগ্রগতি, শান্তি, সাংস্কৃতিক ও জীববৈচিত্র্য এবং বীরত্বের প্রশংসা করে।

২০১৬ সালে বিবিসি তার রিও ২০১৬-এর তালিকায় নেপালের জাতীয় সংগীতকে তৃতীয় স্থান দেয়। এর আগে নেপালের জাতীয় সংগীত, “শ্রীমান গম্ভীর”, ১৯৬২ সালে গৃহীত হয়েছিল। ওই সংগীতটি ছিল তখনকার রাজতন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত যা পরে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

মা শ্রীলঙ্কা

জাতীয় সংগীত, শ্রীলঙ্কা

মূল ভাষা: সিংহলি ও তামিল

শ্ৰী লংকা মাতা অপ শ্ৰী…..লংকা নম’, নম’, নম’, নম’ মাতা!

সুন্দর শ্রীবরনী সুরন্দি অতি শোভমান লংকা

সমৃদ্ধিতে অঢেল, তুমি,

করুণা এবং ভালবাসায় সুন্দর,

শস্য এবং সুস্বাদু ফল দিয়ে ভরা,

এবং উজ্জ্বল রঙের সুগন্ধি ফুল,

জীবন এবং সমস্ত ভাল জিনিস দানকারী

আমাদের আনন্দ ও বিজয়ের দেশ,

আমাদের কৃতজ্ঞ প্রশংসা গ্রহণ করুন, আমরা প্রার্থনা করি।

হে লঙ্কা মাতা! আপনাকে সালাম, অভিবাদন, স্যালুট!

আপনি আমাদের জ্ঞান এবং সত্য দিয়েছেন,

আপনি আমাদের শক্তি এবং অন্তর্নিহিত বিশ্বাস,

আমাদের আলো ঐশ্বরিক এবং সংবেদনশীল সত্তা,

জীবন ও মুক্তির শ্বাস।

আমাদের দান করুন, স্বাধীনতা, অনুপ্রেরণা।

চিরকালের জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করুন। (সংক্ষেপিত)

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা অর্জন করলেও শ্রীলঙ্কা ব্রিটেনের জাতীয় সংগীত ব্যবহার করতো। ১৯৫১ সালে দেশটির সরকার আনন্দ সামারাকুনের অনুবাদকৃত নমো নমো মাতা, সুন্দর শ্রীবরণী গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে।

১৯৫২ সালে এম. নল্লথম্বি গানটি তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৯৫০-এর দশকের শেষের দিকে গানটির প্রথম লাইন নমো নমো মাতা নিয়ে অনেক বিতর্ক শুরু হয়। এটিকে দেশের জন্য দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল এবং দেশের দুই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী করা হয়েছিল। তাই শ্রীলঙ্কা সরকার ১৯৬১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনন্দ সামারাকুনের অমতে ও প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও গানটির প্রথম লাইনে পরিবর্তন আনা হয়। তার রচিত জাতীয় সংগীতের ক্ষতিসাধনকে দায়ী করে আনন্দ সামারাকুন ১৯৬২ সালের এপ্রিলে মাসে আত্মহত্যা করেন।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রী সংবিধান শ্রীলঙ্কা মাতা গানটিকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করে।

অনেকে মনে করতেন নমো নমো গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা। তবে সে বিতর্কের অবসান হয়েছে বহুত আগেই। সামারাকুন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথের ছাত্র ছিলেন। শ্রীলঙ্কা ফিরে যাবার পর তিনি মাহিন্দা কলেজে গান শেখাতেন। মাহিন্দা কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম তার লেখা নমো নমো মাতা গানটি পরিবেশন করেন। ধীরে ধীরে গানটি শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয় হয়।

বজ্রড্রাগন রাজত্ব

জাতীয় সংগীত, ভুটান

মূল ভাষা: দোজংখা

ভুটানের বজ্রড্রাগন রাজত্ব সাইপ্রাস গাছে সজ্জিত

রক্ষাকর্তা, যিনি আধ্যাত্মিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের রাজ্যে রাজত্ব করেন,

তিনি ভুটানের রাজা, মহামূল্য সার্বভৌম।

তাঁর সত্তা অপরিবর্তিত থাকুক, এবং রাজ্য সমৃদ্ধ হোক,

আলোকিত একজন সবাইকে শেখাক,

সুখ ও শান্তির সূর্য সব মানুষকে আলো দিক।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫৩ সালে রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুক ভুটানের জন্য একটি জাতীয় সংগীত রচনার নির্দেশ দেন। গানের কথা, কোরিওগ্রাফি এবং সুর তখন ইংল্যান্ড এবং ভারতের জাতীয় সংগীতকে একটি রেফারেন্স হিসাবে নিয়ে রচিত হয়েছিল। সংগীতটি একটি লোক সুর দ্বারা অনুপ্রাণিত।

 

এই দেশ সাহসীদের

জাতীয় সংগীত, আফগানিস্তান

মূলভাষা: পাশতো ও দারি

সাহসীদের এই দেশে

আমরা রক্ত দিয়ে তোমাদের রক্ষা করব

এই দেশ শহীদদের, এই মাটি সাহসীদের

তোমার সব পাথর আর ঝোপ আমাদের কাছে মাণিকের মত লাগে

তাদের রক্ত ঝরেছে, তারা সব গোলাপের মত লাল

তাদের রক্ত ঝরেছে, তারা সব গোলাপের মত লাল

তোমরা কি মনে করা না, এটা বিজয়? এটি সিংহদের আবাসস্থল

এই দেশ শহীদদের, এই ঘর সাহসীদের

আমরা তোমার স্বাধীনতা রক্ষা করব, যতদিন আমাদের জীবন থাকবে

যতদিন জীবন থাকবে ততদিন আমরা তোমার ইতিহাস মনে রাখব। (সংক্ষেপিত)

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: এটি পশতু-ভাষার নাশিদ এবং আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাতের জাতীয় সংগীত। এটি একটি ক্যাপেলা গান, যার অর্থ এটিতে বাদ্যযন্ত্র নেই।

কারণ তালেবানরা যন্ত্রের ব্যবহার করে গান করাকে হারাম মনে করে। এই নাশিদ কমিউনিস্ট যুগের গান “দা দে আজাদি খাওরা” অবলম্বনে তৈরি। এই নাশিদটি সাধারণত ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিক থেকে, যখন গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করত, তখন থেকে তালেবানের অফিসিয়াল রেডিও স্টেশন দা শরীয়ত ঝাগ (“শরিয়ার ভয়েস”) সম্প্রচারের উদ্বোধনী অংশে ব্যবহৃত হত। এই সংগীতের জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত রেকর্ডিংটিতে জনপ্রিয় তালেবান মুন্সিদ (নাশিদ গায়ক) মোল্লা ফকির মুহাম্মদ দরবেশের কণ্ঠস্বর রয়েছে।

 

কউমি সালাম (রাষ্ট্রীয় অভিবাদন)

জাতীয় সংগীত, মালদ্বীপ

মূলভাষা: দিভেহি

হে মাতৃভূমি, আমরা তোমাকে অভিবাদন জানাই, একতাবদ্ধভাবে

আমাদের নিজস্ব ভাষায়, অনেক অনেক শুভকামনাসহ

তোমার অর্ধচন্দ্র এবং তারার প্রতি মাথা নত করে

আমাদের উজ্জ্বল রংগুলো বাতাসে উড়িয়ে, আমরা সমুন্নত রাখি আমাদের পতাকা।

বিজয় এবং সৌভাগ্য তার নিজের

আমরা অভিবাদন জানাই তার পরাক্রমশালী লাল, সাদা এবং সবুজ রঙের।

সেই বীরদের প্রতি যারা জাতির জন্য সম্মান ও গৌরব আনতে চেয়েছেন

আজ তাদের স্মরণে শুভবন্দনা করে সালাম জানাই।

মালদ্বীপের জমিতে থাকতে পারে ভাল সম্পদ

আর ছড়িয়ে পড়তে পারে মালদ্বীপের সুনাম। (সংক্ষেপিত)

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশক জুড়ে মালদ্বীপবাসীরা জাতীয় সংগীতের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। ১৯৬৮ সাল থেকে মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র হয়। তখন থেকে কয়েকটি পরিবর্তনের পর “কওমি সালাম” বা ‘রাষ্ট্রীয় অভিবাদন’ জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়।

এই গান দিয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা, দেশের ইসলামী বিশ্বাস, ঐতিহাসিক যুদ্ধের বিজয় এবং জাতিকে রক্ষা করার জন্য বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। গানের কথা লিখেছেন কবি মোহাম্মদ জামিল দিদি, যিনি পরে প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন।

স্বেচ্ছাসেবকদের পদব্রজ

জাতীয় সংগীত, চীন

মূলভাষা: স্ট্যান্ডার্ড চাইনিজ

ওঠো! দাস হতে আমরা যারা অস্বীকার করি!

আমাদের রক্ত-মাংস দিয়ে চলো আমরা নতুন মহাপ্রাচীর গড়ি!

চীনা জনগণ তাদের সবচেয়ে বড় বিপদের মুখোমুখি।

প্রত্যেকের কাছ থেকে পদক্ষেপের আহ্বান জরুরি।

ওঠো! ওঠো! ওঠো!

আমরা একসাথে লক্ষ কোটি কিন্তু হৃদয় একটি

শত্রুর আগুন ভয় না পেয়ে, এগিয়ে যাও!

শত্রুর আগুন ভয় না পেয়ে, এগিয়ে যাও! এগিয়ে যাও! এগিয়ে যাও!

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সংগীত (মার্চ অফ দ্য ভলান্টিয়ার্স) ১৯৩৪ সালে রচিত তিয়ান হানের “দ্য গ্রেট ওয়াল” কবিতা থেকে নেওয়া। সেই সময়ে একটি চলচ্চিত্রের (ডায়ানটং-এর আসন্ন ফিল্ম ‘চিলড্রেন অফ ট্রাবলড টাইমস’) জন্য এই গানটি তিনি লিখেছিলেন। এ নিয়ে যেসব গল্প রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গ্রেপ্তার হওয়ার পরে তিয়ান এই গানটি লিখেছিলেন জেলে বসে, রোলিং পেপারে বা সিগারেটের বাক্স থেকে নেওয়া লাইনার পেপারে। প্রকৃতপক্ষে, চলচ্চিত্রের খসড়া শেষ করার পরেই তাকে নানজিংয়ে আটক করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১৪ মার্চ চীনের সংবিধানের একটি সংশোধনী হিসাবে সংগীতটি জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায়। ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জাতীয় সংগীতের আইনের (যা আইন দ্বারা সংগীতকে রক্ষা করে) স্থায়ী কমিটি দ্বারা ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে পাস হয় এবং এক মাস পরে কার্যকর হয়।

 

মহারাজের রাজত্ব

জাতীয় সংগীত, জাপান

মূলভাষা: জাপানি

মহারাজের রাজত্ব হোক

সহশ্র বছরের, আট হাজার প্রজন্ম ধরে চলুক

যতক্ষণ পর্যন্ত না নুড়ি-পাথর

বৃহদায়তন শিলা হয়ে ওঠে

বিস্তার লাভ করে শেওলা।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: জাপানের জাতীয় সংগীতের কথাগুলি হেইয়ান যুগের (৭৯৪-১১৮৫) একজন নাম না জানা লেখকের। এই গানটি একটি ওয়াকা ঘরানার বা ছোট আকারের কবিতা থেকে নেওয়া। বর্তমান সুরটি ১৮৮০ সালে গ্রহণ করা হয়েছিল। ‘কিমিগায়ো’ শিরোনামটি দিয়ে “মহারাজা তোমার রাজত্ব” অর্থ বোঝালেও দেশটির জাতীয় সংগীতের অনুবাদনির্ভর কোনো শিরোনাম দাপ্তরিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। ১৮৮৮ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই গানটি জাপান সাম্রাজ্যের জাতীয় সংগীত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটলেও “কিমিগায়ো” দেশটির জাতীয় সংগীত হিসেবে থেকে যায়। তবে গানটি জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি পায় ১৯৯৯ সালে ‘জাতীয় পতাকা এবং সংগীতের আইন’ পাশের মধ্যে দিয়ে। এটা পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম জাতীয় সংগীত।