গণমাধ্যমের কালাকানুন বাতিলের চেষ্টা হচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা

25

ডেস্ক রিপোর্ট: গণমাধ্যমে অনেকগুলো কালাকানুন আছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, পর্যায়ক্রমে সরকারসেই কালাকানুনগুলো বাতিলের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। এই সরকার যেমন ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চায়, ঠিক তেমনি ফ্যাসিবাদমুক্ত মিডিয়াও চায়। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় গণমাধ্যমকে নতুনভাবে দেখতে চায়।

বুধবার দুপুরে প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অনুদান চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। নাহিদ ইসলাম বলেন, দায়িত্ববোধ থেকেই সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে ৩৫০ সাংবাদিকের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মিডিয়াতে অনেক কালাকানুন আছে, পর্যায়ক্রমে আমরা সেই কালাকানুনগুলো বাতিলের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। আমরা যেমন ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ চাই, ঠিক তেমনি ফ্যাসিবাদমুক্ত মিডিয়াও চাই।

উপদেষ্টা বলেন, হাউজ কর্তৃপক্ষ দ্বারা মিডিয়াগুলোতে সাংবাদিকদের নির্যাতন করা হয়েছে, এই আন্দোলনের সময় যারা সাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছে, নির্যাতন করেছে, সেই নির্যাতকরা এখনো মিডিয়া হাউজগুলোতে আগের মতোই রয়েছে। আমরা কোনো গণমাধ্যমের উপর হস্তক্ষেপ করতে চাই না। তবে আমাদের উদ্বেগগুলো আপনাদেরকে জানাচ্ছি। জনগণের দাবিগুলো আপনাদের সামনে জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে দেখেছি আমাদের পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক সাংবাদিক। এটির জন্য সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট কাজ করছে সাংবাদিকদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য যারা আহত ও নিহত হয়েছেন, তারা ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য সম্মাননা জানাবো।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যমের কাছ থেকে আমরা জানতে চাই কেমন সংস্কারটা চান। সংবাদ মাধ্যমে পরস্পরবিরোধী নানা ধরনের স্টেক হোল্ডার রয়েছে। আমরা চাই ন্যায্য দাবিতে সবাই যেন ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। এটি করে দেবে আমাদের মিডিয়ার সংস্কার কমিশন। আমরা যেন এমন একটা রূপরেখা তৈরি করতে পারি যেন সবাই উপকৃত হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকা নাহিদ ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে অভ্যুত্থান হয়েছিলো সেখানে ছাত্ররাই প্রধানত নেতৃত্ব দিয়েছিলো। সেই সমঝোতায় এখন মনে হচ্ছে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। আমরা এটা প্রত্যাশা করি না। দেশ পুনর্গঠনের জন্য আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি।

তিনি বলেন, বলেন, অভ্যুত্থানে আমরা যেমন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে ছিলাম, সেই জায়গাটা কিন্তু এখনো আমাদের রাখা উচিত। রাজনৈতিক সমঝোতা চলছে, সেখানে আমরা চাইব রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্রদের সঙ্গে ও জনগণের সঙ্গে এক ধরনের ঐকমত্যে এসে পৌঁছাক। সরকার যে কোনো ঐকমত্যকে সাধুবাদ জানায়। আমরা যেকোনো জাতীয়-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতেই নেব।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের কথাটি বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু কখনোই বলেনি তারা নির্বাচন দেবে না। মাত্র তিন মাস হলো ক্ষমতায় এসেছে। এখনো সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। পুলিশ প্রশাসন থেকে সব জায়গায় আরো অনেক কাজ করার বাকি আছে। আমরা যদি কিছু মৌলিক কাজ না করতে পারি, তাহলে কিন্তু নির্বাচন কোনো কাজে দেবে না। শুধু ক্ষমতার হাত বদল হবে। নিশ্চয়ই ক্ষমতার হাত বদলের জন্য এত এত মানুষ শহীদ হয়নি।

তিনি বলেন, এই যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, সেখানে আমরা যে প্রায়োরিটিটা দিয়েছি। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে যারা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন সেই পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা এবং তাদের পুনর্বাসন করা। এই কাজ এই সরকারের আমলে সম্পন্ন করা এবং উদ্যোগ নেওয়া। আমাদের দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় আনা। আমরা চাই না জাতি বিভক্ত থাকুক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে এই বিচার প্রক্রিয়ার উদ্যোগ নিতে চাই এবং সম্পন্ন করতে চাই।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, তৃতীয় ধাপ হচ্ছে সংস্কার। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে পড়েছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি দেশের জনগণের আস্থা নাই। আমাদের পুলিশ প্রশাসন নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যম সবগুলোর প্রতি অনাস্থা তৈরি হয়েছে। সেগুলোতে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। সামনে কীভাবে চলবে সেগুলো একটি রূপরেখা দিতে হবে এবং জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। এই নতুন বাংলাদেশে আমরা এই কাজগুলো ধাপে ধাপে করতে চাচ্ছি।

ইউএনএইচআর অফিস খোলার বিষয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টাইউএনএইচআর অফিস খোলার বিষয়ে যা জানালেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস-চেয়ারম্যান মাহবুবা ফারজানা, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক (ডিজি) ফারুক ওয়াসিফ, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা নিজামুল কবীর, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যরা।