অনলাইন ডেস্কঃ ভারতে ইসলমিক রাষ্ট্র গঠনের ছক ও দেশজুড়ে নাশকতার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্য থেকে কট্টর ইসলামিক সংগঠন ‘পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া’ (পিএফআই) এবং ‘সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব ইন্ডিয়া’ (এসডিপিআই)-এর শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ ও ইডি।
দেড় দশকের অভিযানে এটিই এএনআই-এর বৃহত্তম সন্ত্রাস দমন অভিযান। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনে দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল পিএফআই-এর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বিজেপির নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় তাদের নাম উঠে আসে। খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
নয়াদিল্লি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯শে আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে এনআইএ, ‘র’, গোয়েন্দা বিভাগ (আইবি)-এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পিএফআইসহ কয়েকটি কট্টরপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপরই বুধবার গভীর রাতে একযোগে উত্তর প্রদেশ, বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, পুডুচেরি, আসাম, রাজস্থানে পিএফআইয়ের ২০ টি কার্যালয়ে হানা দেয় গোয়েন্দারা।
জানা গেছে, তামিলনাডুর কোয়েম্বাটোর, কুদ্দালোর, রামনাদ, ডিন্ডুগাল, থেনি এবং থেনকাসিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পিএফআই-এর নেতাদের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। চেন্নাই পিএফআই রাজ্য কার্যালয় পুরসাওয়াক্কামেও তল্লাশি চালানো হয়।
এদিকে, গুয়াহাটির হাতিগাঁও এলাকায় গতকাল আসাম পুলিশ ও এনআইএ যৌথ অভিযান চালিয়ে দেশদ্রোহিতার জন্য ৯ জন পিএফআই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রচুর ভারতবিরোধী নথি উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছে এনআইএ।
একইভাবে কলকাতার পার্ক সার্কাসে ৫৯ সি তিলজলা রোডে বৃহস্পতিবার ভোরে অভিযান চালায় এনআইএ ও ইডির গোয়েন্দরা। তিলজলার এই আবাসনের চতুর্থ তলে ভাড়া নিয়ে ওই সংগঠন একটি অফিস করেছে। ওই অফিস বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে বলে দাবি স্থানীয়দের।
সূত্রের খবর, বিভিন্ন কম্পিউটার ঘেঁটে তদন্তকারীরা বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। সঙ্গে সন্দেহজনক বেশ কিছু বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। ওই অফিসে দুজনকে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্তকারীরা।
সব মিলিয়ে এই অভিযান ১১ রাজ্য থেকে শতাধিক পিএফআই ও এসডিপিআই সদস্য ও এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেরালা থেকে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেরালা থেকে ২২ জন, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটক থেকে ২০ জন করে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ৫ জন, আসাম থেকে ৯, দিল্লি থেকে ৩, মধ্যপ্রদেশ থেকে ৪, পুডুচেরি থেকে ৩, তামিলনাড়ু থেকে ১০, উত্তর প্রদেশ থেকে ৮, রাজস্থান থেকে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবারের অভিযানের পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও। পরবর্তী পদক্ষেপ ও ওই দুই সংগঠনের গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়।
পিএফআই-এর পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই তাদের সংগঠনের জাতীয় ও রাজ্যস্তরের একাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে এনআইএ।
চলতি মাসের শুরুর দিকেই তেলাঙ্গানার ৩৮টি স্থানে এবং অন্ধ্রপ্রদেশের দুটি স্থানে অভিযান চালিয়েছিল এনআইএ। তেলাঙ্গানার নিজামবাদ জেলার আব্দুল কাদের এবং অপর ২৬ ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত একটি মামলার প্রেক্ষিতে সেই তল্লাশি চালানো হয়েছিল। সেই অভিযানে বেশ কিছু ডিজিটাল ডিভাইস, নথি, দুটি ছোরা এবং নগদ ৮ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ রুপিসহ অপরাধমূলক বহু সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করেছিল এনআইএ।
জুন মাসে পিএফআই এবং তার সহযোগী সংগঠনের ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। এর মধ্যে পিএফআই-এর ২৩টি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৬০ লাখ রুপি এবং রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের ১০টি অ্যাকাউন্টের প্রায় সাড়ে ৯ লাখ রুপি রয়েছে।
২০০৬ সালে পিএফআই গঠনের পর থেকেই তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে। শুরুতে দক্ষিণ ভারতে কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতেও সংগঠনটির সক্রিয়তা বাড়ে।
গোয়েন্দাদের মতে, নিষিদ্ধ সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া’ (সিমি)-র মুখ হিসেবে সহিংসতামূলক কার্যকলাপে গত দেড় দশক ধরে সহযোগিতা দিয়ে এসেছে পিএফআই।
সিমি-র অধিকাংশ সদস্যই পিএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কেরালা ও কর্ণাটকে প্রায় সময়ই পিএফআই ও সংঘ পরিবারের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনাও সামনে আসে।
২০১২ সালে কেরালা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পিএফআই আসলে নিষিদ্ধ সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়াই। তারাই নাম বদলে এই নতুন সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। এরপরই রাজ্য সরকারের তরফে পিএফআইয়ের ফ্রিডম প্যারেডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তল্লাশি চালিয়ে পিএফআই সদস্যদের কাছ থেকে অস্ত্র, বোমা, গানপাউডার, তলোয়ারসহ একাধিক বস্তু উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, এই সংগঠনের সঙ্গে তালেবান ও আল-কায়েদার যোগসূত্র রয়েছে। ২০০৩ সালে কেরালার কোঝিকোড়ে দাঙ্গা বাঁধানো ও আটজন হিন্দুকে খুন করার অভিযোগও ওঠে পিএফআই সদস্যদের বিরুদ্ধে।
গত জুলাই মাসে বিহার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক সিমি গোষ্ঠীর সন্ত্রাসবাদী পারভেজ এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা জাল্লুউদ্দিন। জানা গেছে, তারা পিএফআইয়ের জন্য লাখ লাখ রুপির তহবিল সংগ্রহ করেছে। ওই সময় পিএফআইয়ের একটি ৮ পৃষ্ঠার নথি উদ্ধার করে বিহার পুলিশ। যে নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতকে ইসলামিক রাষ্ট্র বানানোর ছক তৈরি করছে পিএফআই।
Bangladeshpost24.com