Bangladeshpost24.com
ওবায়দুল কাদের

অনলাইন ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানের বাইরে তত্ত্বাবধায়কের নামে কোনো অস্বাভাবিক সরকার আওয়ামী লীগ মানে না, মানবে না। সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে আসে কিনা- তা দেখার অপেক্ষায় আছি। গতকাল বুধবার রাজধানীতে আলাদা দুটি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ বনানী মডেল স্কুল মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ উপলক্ষে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে সমাবেশ দুটির আয়োজন করে।

এদিকে বিএনপি ও তার মিত্রদের সারাদেশে মিছিল-সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে সম্ভাব্য নৈরাজ্য ঠেকাতে বুধবার এই দুটি সমাবেশের পাশাপাশি রাজধানীজুড়ে আওয়ামী লীগের সতর্ক অবস্থান ছিল। এই দুই সমাবেশেই বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন। ফলে সমাবেশ দুটি কার্যত বিশাল সমাবেশে রূপ নেয়। যুবলীগ মহানগরীতে আলাদা দুটি সমাবেশ করেছে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অন্য সহযোগী সংগঠনগুলো দিনভর রাজধানীতে অবস্থানসহ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে শোডাউন করে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ না করে গরুর হাটে করেছে! তাদের আন্দোলন জোয়ার থেকে ভাটার দিকে যাচ্ছে। এই আন্দোলনে জনগণ নেই, কেবল তাদের কর্মীরা রয়েছেন। বিএনপির কথা এ দেশের জনগণ আর বিশ্বাস করে না।

বাকশাল নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি বাকশাল নিয়ে কথা বলে! মির্জা ফখরুল বাকশালের বিরুদ্ধে কথা বলেন! কিন্তু কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বা বাকশাল একদলীয় নয়। এটা সব দল ও মত নিয়ে গঠিত জাতীয় দল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুর কাছে আবেদন করে বাকশালের সদস্য হয়েছিলেন। ডকুমেন্ট আমাদের কাছে আছে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, কৃষক-শ্রমিককে ঘৃণা করে বিএনপি। তাই সার ও মজুরির দাবিতে আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছে তারা।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপির কত হাঁকডাক! মির্জা ফখরুল সরকারকে লাল কার্ড দেখাতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরেছেন। বিএনপি এখন পথহারা পথিকের মতো দিশেহারা। খেলা এখনও শুরু হয়নি, শুরু হলে কোথায় যাবেন?
তিনি বলেন, ভুয়া জোটের মাধ্যমে গঠন করা বিএনপির আন্দোলনও ভুয়া। তাদের সরকার পতনের হুমকি, ৫৪ দল, ১০ দফা আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি- সবই ভুয়া। বিএনপির হাঁকডাক, লোটা-কম্বল, মশার কয়েল, সাত দিন আগে থেকে সমাবেশের প্রস্তুতি সবই ব্যর্থ।

সেতুমন্ত্রী বলেন, এই সমাবেশ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয়। এটি গণঅভ্যুত্থান দিবসের কর্মসূচি। বিএনপি এসব দিবস পালন করে না। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে বিএনপির কেন অন্তর্জ্বালা? দেশের উন্নয়নের জ্বালায় জ্বলছে বিএনপি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো দ্রুত দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, কমিটিগুলো দ্রুত করতে নেত্রীও নির্দেশ দিয়েছেন। মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ করব- সামনে নির্বাচন, গণসংযোগ করতে হবে, সদস্য সংগ্রহ অভিযান করতে হবে; তাই এদিকে নজর দিন। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করুন, নতুন কিছু করুন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একসঙ্গে বসুন। একজন বসবেন আর আরেকজন অসুস্থতার দোহাই দিয়ে সরে যাবেন- এটি হবে না।

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, বিএনপির এসব সভা-সমাবেশ সামান্য হাঁকডাক মাত্র। আওয়ামী লীগ এখনও মাঠে নামেনি। মাঠে নামলে বাটি চালান দিয়েও বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেই বিএনপি ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটছে। বিএনপিকে দিয়ে দেশে গণঅভ্যুত্থান সম্ভব না। আওয়ামী লীগকে গণঅভ্যুত্থানের ভয় দেখিয়েও লাভ নেই।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। এই নির্বাচনে হেরে যাবে জেনেই বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। তাদের আগের কর্মসূচিগুলো জঙ্গিবাদ, খুন, অত্যাচারসহ সন্ত্রাসী কর্মকাে র ছিল। তাই জনবিচ্ছিন্ন কাজের জন্য জনগণই তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, মহানগর নেতা নুরুল আমিন রুহুল, ডা. দিলীপ রায়, গোলাম আশরাফ তালুকদার, আকতার হোসেন, রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ প্রমুখ।

‘এই বীরের দেশে বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই’ :বনানী মডেল স্কুল মাঠে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগ সংগঠিত। তবে আমরা নেত্রীর (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ এই বীরের দেশে বিশ্বাসঘাতকের অভাব নেই।

তিনি বলেন, আজ বিএনপি ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করেছে। বিশ্বাসঘাতকদের যোগসাজশ না থাকলে তারা কোনো দিন সফল হবে না, হতে পারে না। সরকারের পতন নয়, আগামীতে আন্দোলন ও নির্বাচনে ব্যর্থ বিএনপি নেতাদেরই পদত্যাগ দাবি করবেন দলটির নেতাকর্মীরা।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রায় তিন হাজার শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান, মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওয়াকিল উদ্দিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম প্রমুখ।

যুবলীগের দুই সমাবেশ :যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে অবস্থান ও সমাবেশ করেছে। সংগঠনের সহসভাপতি কামাল উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ, মনজুরুল আলম শাহীন, হরে কৃষ্ণ বৈদ্য, মহানগর নেতা সোহরাব হোসেন স্বপন, আবু সাঈদ মোল্লা, সৈয়দ আহমেদ, মিজানুর রহমান বকুল, গাজী সরোয়ার হোসেন বাবু, মাকসুদুর রহমান মাকসুদ, কাজী ইব্রাহিম খলিল মারুফ প্রমুখ।

মহাখালীতে সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন, বদিউল আলম বদি, সাদ্দাম হোসেন পাভেল, মহানগর নেতা আকতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীর রহমান, সিদ্দিক বিশ্বাস প্রমুখ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশ :রাজধানীর মৎস্য ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ অবস্থান কর্মসূচি ও সমাবেশ করে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু, সহসভাপতি তানভীর শাকিল জয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

 

Bangladeshpost24.com

Previous articleসরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
Next articleনির্বাচনে জিতব, অর্থনীতিও পুনর্গঠন করব : ইমরান খান