অনলাইন ডেস্কঃদীর্ঘ সাত বছর পর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন মঙ্গলবার (১৩ই
ডিসেম্বর) হচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের উদ্বোধন এবং বিকেলে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কাউন্সিল অধিবেশনে নেতা নির্বাচন হবার কথা রয়েছে। গতবার মনোনয়নে নেতা নির্বাচন হলেও এবার কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন হতে পারে বলে প্রচার পাচ্ছে। আবার পুরোনোরা বহাল থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ভারমুক্ত হতে পারেন বলেও ধারণা নেতা-কর্মীদের।
জেলা আওয়ামী লীগের অধীন কক্সবাজার সদর উপজেলা, কক্সবাজার পৌরসভা, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরীসহ মোট ১১টি সাংগঠনিক উপজেলা। কয়েকটি ছাড়া প্রায় সবকটি কমিটির সম্মেলন শেষ হয়েছে। নেতা নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর করা হয়েছে ৪০৬ জনকে। ইতিমধ্যে দুই পদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ১৩ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।
দলীয় সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই দিন কেন্দ্র থেকে সিরাজুল মোস্তফাকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। পরে সভাপতির দায়িত্ব পান সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে আসছে।
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে ৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ জন্য জেলার সব ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করা হয়। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফর এবং জনসভার কারণে সম্মেলনের তারিখ ৫ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ১৩ ডিসেম্বর করা হয়।
তিনি আরো বলেন, বহুল প্রত্যাশিত জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। ইতিমধ্যে ৪০৬ জনের কাউন্সিলার তালিকা চুড়ান্ত হয়েছে। প্রতি ১০ হাজার জনে একজন হিসাবে ২৮০, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আছে ৭১ জন, এছাড়া প্রতি উপজেলা থেকে ৫ জন হিসাবে ৫৫ জন মিলিয়ে ৪০৬ জন কাউন্সিলর। এছাড়া ডেলিগেট থাকবে প্রায় দেড় হাজার।
দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলনের আয়োজনে খুশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, এর আগে বহুবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হলেও করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে সম্মেলন হয়ে ওঠেনি। ৭ ডিসেম্বর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেখ হাসিনার জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগমে নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মনে চাঙাভাব ফিরে এসেছে। ৭ ডিসেম্বর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেওয়া মঞ্চেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম।
দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ১৩ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে সভাপতি পদপ্রত্যাশী পাঁচজন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আটজন। সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রণজিত দাশ, যুগ্ম সম্পাদক ও কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক রাশেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহাবুবুর রহমান, সদস্য রাশেদুল ইসলাম এবং ঈদগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবু তালেব।
সম্প্রতি কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন রণজিত দাশ। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। রণজিত দাশ বলেন, স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে মাঠে আছেন। কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মূল্যায়িত হবেন। দল সু-সংগঠিত হবে।
আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী রেজাউল করিম বলেন, সম্মেলনে অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনাই মূল।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হবার প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি না এসে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন তিনি। সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিশেষ অতিথি থাকছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ অনেকে।
Bangladeshpost24.com